
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এক বছরও হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঠিকাদাররা প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেওয়ার আট মাসের মধ্যেই সড়কের কিছু অংশ ফুলে উঠেছে। এটিকে প্রকৌশলীদের ভাষায় ‘রাটিং’ বলা হচ্ছে। কিছু অংশে সড়কের দু’পাশ দেবে গেছে। প্রকৌশলীরা যেটিকে ডিপ্রেশন বলেন। বছর না যেতেই প্রায় ৫৫৪ কোটি টাকার সড়কের অনেক স্থান বেহাল। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ।
বাঘার মনিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা রমজান আলীর ভাষ্য, এ সড়ক দিয়ে দিনরাত দক্ষিণাঞ্চলের পাথর ও খাদ্যপণ্য বোঝাই গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে। আবার কোথাও ফেটে উঁচু হয়ে গেছে। এতে গাড়িগুলো ঠিকমতো ব্রেক করতে পারে না। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে জানা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে চারঘাট-বাঘা-নাটোরের লালপুর হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার। ১৮ ফুট থেকে সড়কটি হয়েছে ৩৪ ফুট চওড়া। সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরে আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।
সড়কের কাজ শেষ করে গত ডিসেম্বরে ঠিকাদাররা হস্তান্তর করলেও চারঘাট ও বাঘা বাজারে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এখনও শুরু হয়নি। পুরো সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষত তৈরি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। সাতজন ঠিকাদার সাতটি প্যাকেজে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন।
রাজশাহী শহরের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরাসরি যোগাযোগের এ সড়কের দু’পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট ফুটপাত রাখা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পাশে নির্মাণ করা হয়েছে নালা। বাজার এলাকায় পানি জমে এমন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে ঢালাই সড়ক। ব্যয়বহুল ও গুরুত্বপূর্ণ হলেও বছর না ঘুরতেই বেহাল হয়ে পড়েছে অনেক জায়গা। এ জন্য নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও প্রকৌশলীদের দাবি, এ অবস্থার পেছনে নির্মাণ ত্রুটি দায়ী নয়। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এমন হয়েছে। নির্মাণের পরবর্তী দুই বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিনা খরচে ত্রুটি মেরামতের জন্য চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। এ জন্য চুক্তি অনুযায়ী তারা সংস্কার করছে। সরেজমিন আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের চারঘাট, বাঘা ও লালপুর উপজেলার অন্তত ৩০ স্থানে ‘রাটিং’ ও ‘ডিপ্রেশন’ ছোট পাথর, বালু ও বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেওয়া হয়েছে জোড়াতালি।
চারঘাটের কাঁকড়ামারীর মজিবর রহমান বলেন, ২০২০ সালে কাজ শুরুর পর ২০২৩ সাল পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে এলাকাবাসী ভোগান্তির শিকার হন। বাজারে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঠিকাদার দায়সারাভাবে কাজ করেছে। তারপরও গত বছরের শেষের দিকে কাজ শেষ হলে আমরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই সড়ক দেবে বসে গেছে। এখন দেখি প্রায়ই বিটুমিন, পাথর, বালু দিয়ে সংস্কারের কাজ চলে।
সড়কটি নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চারঘাট উপজেলার সভাপতি সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, প্রতিবাদ করেও কাজ বন্ধ করা যায়নি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ঠিকাদারকে পাথর ও বালু সরবরাহ করায় তারা ক্ষমতা দেখিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে।
দরপত্রের নিয়ম মেনে কাজ করেছেন বলে দাবি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। সড়কে কোনো সমস্যা হলে দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী সংস্কার করা হবে। এ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেজওয়ানা করিমের ভাষ্য, অতিরিক্ত গরম পড়লে সড়কে রাটিং ও ডিপ্রেশন হয়। তবে দু’বছরের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদার ঠিক করতে বাধ্য। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে সড়ক যেন টেকসই হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাকিম বলেন, সড়কের কাজে কোনো অনিময় হয়নি। আন্দোলনের সময় টায়ার জ্বালানোর কারণে সড়ক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ ছাড়া যেন আরও টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, এ জন্য কিছু সংস্কার করা হচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচল কমাতে কাজ চলছে।