/ Jul 25, 2025

বলধায় ফোটা জহুরিচাঁপা

কয়েকবার নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়িতে গিয়েছি। দু’বার রাজবাড়ির অন্দরমহল ও প্রাসাদ সংযুক্ত ইটালিয়ান গার্ডেন ঘুরে গাছগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির নাম পাল্টিয়ে উত্তরা গণভবন করা হলেও ইটালিয়ান গার্ডেনের নাম বদলায়নি।

ধারণা করা হয়, ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে রাজবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি পুনর্গঠনের সময় উদ্যানটি তৈরি করা হয়। বাগানের অলংকার ও মূর্তি ইতালি থেকে আনা হয়েছিল বলে শোনা যায়। এ কারণে বাগানটির নাম হয় ইটালিয়ান গার্ডেন। বাগানের এক পাশে একটা গাছ দেখিয়ে জনৈক মালী বলেছিলেন, ‘ওটা ডিম ফুলের গাছ; ঝিলের পাড়ে আছে হৈমন্তী গাছ’। দুটি নামই নতুন মনে হওয়ায় গাছ দুটি দেখানোর অনুরোধ করি। হৈমন্তী গাছের কাছে গিয়ে শনাক্ত করি, ওটি আসলে কুরচি বা গিরিমল্লিকা গাছ। এগ-প্লান্ট বা ডিম-ফুল বলে যাকে দেখানো হলো, সেটিতে ফুল দেখে চিনতে কষ্ট হলো না, ওটাই জহুরিচাঁপা।

আহা, জমিদারদের কী বিলাসিতাই না ছিল! আর বাগান পরিকল্পনাও চমৎকার। প্রাসাদের একটি কক্ষের জানালার কোলে লাগানো জহুরিচাঁপা গাছে ফুল ফোটে রাতে বেলায়; সুগন্ধ বিলায়। সেই সৌরভ হাওয়ায় ভেসে ঢোকে কক্ষের ভেতর। কক্ষবাসীকে দেয় নির্মল প্রশান্তি।

১ মে একটা ফেসবুক পোস্টে দেখলাম, রমনায় জহুরিচাঁপা ফুটেছে। পরদিন সকালে গিয়ে হাজির হলাম সেখানে। শাপলাকুঁড়ি পানির ট্যাঙ্কের কাছে তিনটি রাস্তা দিয়ে ঘেরা জায়গাটায় দুটি জহুরিচাঁপা গাছ। একটিতে ফুল নেই। শেষে গামারি গাছের কাছে পেলাম অন্য গাছটিকে। তাতে দুটি ফুল, কয়েকটা কুঁড়ি। ফুলের দু-একটা পাপড়ি খসে পড়েছে। মৃদু সুগন্ধ টের পাচ্ছি। কিন্তু হায়! ছবি তোলার জন্য ফুলকে একটু বোঁটা ধরে উঁচু করতেই প্রায় সব পাপড়ি খসে পড়ল। মন খারাপ করে ফিরে এলাম, তবু সান্ত্বনা পেলাম– রমনায় দুটি জহুরিচাঁপা গাছ আছে। অন্যদিন না হয় ছবি তোলা যাবে।

প্রকৃতিসখা রবিনকে নিয়ে আরেকবার গেলাম রাতের বেলায়। একটি ফুটি ফুটি করা ফুলের দেখা পেলাম। তাতে ঠিক ছবি তোলার জন্য মন ভরল না। অবশেষে মাঝ আষাঢ়ে বলধা উদ্যানের সাইকীতে গিয়ে আরাধ্য ফুলের দেখা পেলাম। মালী হাফিজুর রহমান সাহায্য করলেন ফোটা ফুলের ছবি তুলতে।

জহুরিচাঁপা নামটা যত সুন্দর, ফুল দেখে তত সুন্দর মনে হয় না। এটি ম্যাগনোলিয়া গোত্রের। কিন্তু ম্যাগনোলিয়া বা উদয়পদ্মের মতো পাপড়ি পুরোপুরি খোলে না। তাই ফোটা ফুল দেখতে ডিমের মতো লাগে। এ জন্যই ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে এগ-প্লান্ট। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির মালীদের মুখে মুখে নাম রটেছে বাংলা নাম ডিম-ফুল।

জহুরিচাঁপার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ম্যাগনোলিয়া লিলিফেরা (Magnolia lillifera) ও গোত্র ম্যাগনোলিয়েসি। গুল্ম প্রকৃতির এ গাছ গোড়া থেকে কয়েকটা খাড়া কাণ্ড নিয়ে ঝোপালো হয়ে বাড়তে থাকে। গাছ বড় জোর ২ মিটার লম্বা হয়। পাতা খসখসে, ধূসর সবুজ, মাঝারি আকারের, উপবৃত্তাকার, ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ঘিয়ে-সাদা, সুগন্ধি। কিছুটা আনারসের মতো ঘ্রাণ পাওয়া যায়। এই ঘ্রাণ প্রশান্তিদায়ক ও মানসিক চাপ মুক্ত করে। ফুলের পাপড়ির গড়ন কিছুটা ঝিনুকের মতো। তবে জাতভেদে ফুলের কিছু পার্থক্য দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে গ্রীষ্ম-বর্ষায়। বীজ হয় না। তাই গুটিকলম ও দাবাকলম দিয়ে চারা তৈরি করা হয়। ইন্দোমালয় অঞ্চল জহুরিচাঁপার আদি নিবাস। বাগানে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে দুর্লভ গাছ হিসেবে এটি লাগানো হয়।

সূত্র- সমকাল

satkahan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চারঘাটে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর চারঘাটে লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর […]

তালেবান সরকারকে প্রথম স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

ডেস্ক নিউজঃ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী […]

সারাদেশে টানা পাঁচদিন বৃষ্টির বার্তা

আজ শনিবার থেকে আগামী পাঁচদিন সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, কোথাও কোথাও […]

সাম্প্রতিক >

সম্পাদক
সনি আজাদ

মন্ত্রী রোড, চারঘাট, রাজশাহী
+880 171 801 5136
sonyahmed802271@gmail.com

© 2024 SatkahanBD. All rights reserved