
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে পাল্টাপাল্টি দুই দেশের চার জেলেকে আটকের পর বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্ত চর এলাকার কৃষক ও পদ্মা নদীর জেলেরা। ফলে পদ্মার ভরা মৌসুমেও নদীতে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না জেলেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেরা বলছেন, বাংলাদেশের সীমানায় হুটহাট ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। এক্ষেত্রে তারা মানছেন না সীমান্ত আইন। এ অবস্থায় সীমান্তের কাছাকাছি গেলে যেকোনো মুহুর্তের বিপদের আশংকা করছেন তারা।
বিজিবি ও স্থানীয় জেলেরা জানায়, গত বুধবার (২ অক্টোবর) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যায় জেলেরা। সকাল ১১ টার দিকে বিএসএফ এর একটি টহল দল সেখানে এসে দুই জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। আটককৃতরা হলেন, চারঘাট পৌরসভার চক মোক্তারপুর গ্রামের মৃত তুফান আলীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৩০) ও একই গ্রামের মৃত খালেক আলীর ছেলে মানিক আলী (২৮)। আটক দুই বাংলাদেশী জেলেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বিএসএফ এর সাথে যোগাযোগ করে বিজিবি। কিন্তু বিএসএফ তাতে সাড়া না দিয়ে থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করেন।
পরে একই দিন বিকাল পাঁচটার দিকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে পদ্মা নদী থেকে দুই ভারতীয় জেলেকে আটক করে বিজিবি। আটককৃতরা হলেন, ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরপাড়া থানার লালকুপ গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আইনুল হক (৫৫) এবং একই গ্রামের জার্মান আলী ছেলে শোয়েব নবী শেখ (৪০)। দুই ভারতীয় জেলেকে চারঘাট মডেল থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করে বিজিবি। বৃহস্পতিবার ( ৩ অক্টোবর) তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভারতীয় দুই নাগরিকে কারাগারে পাঠানোর পর পদ্মার নদীর চারঘাট-বাঘা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় স্পীড বোড নিয়ে টহল শুরু করে বিএসএফ। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলেরা আতঙ্কে নদীতে নামতে পারছেন না। চর এলাকার কৃষকেরা কৃষি কাজে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। নিজ দেশের সীমান্তের মধ্যে অবস্থান করতে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রচারণাও শুরু করেছে।
চারঘাটের গোপালপুর এলাকার জেলে সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, নদীতে পানি অনেক বেশি। অধিকাংশ জেলে নিয়ম কানুন কম বোঝেন। নদীর কোনো অংশে মাঝ বরাবর দুই দেশের সীমানা আবার কোথাও তাদের কিংবা আমাদের অংশ বেশি। মাছ ধরতে গেল রাত বিরাতে সীমানা নির্ধারণ করা কঠিন। দুই ভারতীয় জেলেকে ধরার পর বিএসএফ উগ্র ভাবে স্পীড বোট নিয়ে টহল দিচ্ছে। এজন্য ভয়ে আমরা জেলেরা কেউ নদীতে নামিনি।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ভারতীয় জেলেরা আমাদের সীমানার ভেতরে এসে মাছ ধরে, অথচ আমরা নিজ দেশের সীমানাতেও বিএসএফ এর ভয়ে থাকি। দুই ভারতীয়কে আটক করার পর পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। জানিনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিভাবে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অধিকাংশ জেলেই নদীতে নামবেনা। কারণ বিএসএফ গুলি চালাতেও দ্বিধা করেনা। তারপর দু একজন ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরছেন।
স্থানীয় নদীর মাছের আড়তদার বাহাদুর আলী বলেন, আমার আড়তে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪৫০ কেজি নদীর মাছ বেচাকেনা হয়৷ কিন্তু জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখায় আমিও আড়ত বন্ধ রেখেছি।
চারঘাটের চক মোক্তারপুর এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ খোদাবক্স আলী বলেন, নিজ দেশের সীমানাতেই মাছ ধরছিল জেলেরা। সেখান থেকে সীমান্ত আইন অমান্য করে বিএসএফ দুজনকে আটক করে নিয়ে গেছে। স্থানীয় জেলেদের পক্ষ থেকে বিজিবির সাথে যোগাযোগ করছি। তারা সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছে। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ঢুকে জেলেদের ধরে নিয়ে গেলে তারা সতর্ক থাকবে কিভাবে!
রাজশাহী বিজিবি-১ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে জেলেরা নির্ভয়ে নামতে পারবেন। তবে কোনো ভাবেই ভারতের জলসীমায় যাওয়া যাবেনা। কারণ আমাদের দেশের ভেতরে থাকলে বিপদ হলে আমরা রক্ষা করতে পারবো। তাদের সীমান্তের ভেতরে গেলে আমরা তাদের উদ্ধার করতে পারবো না। প্রচারণার পাশাপাশি সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছি। বিএসএফ গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকালে নদীতে টহল দিয়েছি। তাৎক্ষণিক আমরাও দ্বিগুণ সদস্য নিয়ে নদীতে টহল দিয়েছি।
জানা যায়, এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর পদ্মা নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির অভিযানে মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর এলাকার বসন্ত মণ্ডল নামে ভারতীয় জেলেকে আটক করে বিজিবি। তাৎক্ষণিক বিএসএফ এর একটি টহল দল বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানায়। বিজিবি সদস্যরা ছাড়তে অপারগতা জানালে বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও গুলি ছোঁড়ে। গোলাগুলিতে এক বিএসএফ সদস্যের মৃত হয়।